পাথরঘাটায় কোস্ট গার্ডের সাথে জেলেদের সংঘর্ষ আহত ১০ নিখোঁজ ৪

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ২০:০০ | অনলাইন সংস্করণ

  মোঃ জিয়াউল ইসলাম,পাথরঘাটা প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া):

ছবি : প্রতিনিধি

বরগুনার পাথরঘাটায় সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে দুটি ট্রলিং ট্রলার আটক করে দক্ষিণ স্টেশন কোস্টগার্ড পাথরঘাটা। আটককৃত ট্রলিং ট্রলার থেকে  চাঁদা দাবি করে  কোস্ট গার্ড এমন দাবি জেলেরা। এছাড়াও ট্রলারের মাছ ছিনিয়ে নেয়। এনিয়ে জেলেদের সাথে কথা কাটাকাটি হলে জেলেদের লক্ষ্য করে ৩৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে কোস্টগার্ডের সদস্যরা। এঘটনায় দুই জেলে আহত হয়েছে। এছাড়াও ট্রলার থেকে খালে পড়ে ৪ জেলে নিখোঁজ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পাথরঘাটর জেলেরা।

এদিকে বিক্ষিপ্ত জেলেরা কোস্ট গার্ডের গাড়িটি ভাঙচুর করে পরে এলাকা জুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। শেষমেষ পরিস্থিতি শান্ত হয়

মঙ্গলবার দিবাগত সাড়ে রাত দশটা দিকে বরগুনার পাথরঘাটার বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর বাড়ানি খালে কোষ্টগার্ডের বোর্ট কুলে এঘটনা ঘটে। এর আগে সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় আলম কোম্পানি ও মাসুম কোম্পানির দুটি মডিফাইড ট্রলিং ট্রলার আটক করে কোস্টগার্ড।

জেলেদের অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়ায় উত্তেজিত হয়ে কোস্টগার্ড সদস্যরা প্রথমে কথাকাটাকাটি ও পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে জেলেদের লক্ষ্য করে প্রায় দশ রাউন্ড গুলিও ছোড়ে তারা। পরে স্থানীয় জেলেরা উত্তেজিত হয়ে কোস্টগার্ডের একটি মোটরসাইকেল ও একটি পিকআপ ভাঙচুর করে, এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।

স্থানীয় জেলেরা ও আটককৃত একটি ট্রলার মালিক ও বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম আকন জানান, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরার জন্য যায় উপকূলের হাজার হাজার জেলেরা। বঙ্গোপসাগরে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে আমার একটি ট্রলার ঘাটের দিকে আসে। এসময় কোষ্টগার্ড ট্রলার আটক করে। এরপরপরই আলম কোম্পানি’র আরেকটি ট্রলার আটক করে। পরে আমাদের উপস্থিতিতে কোস্টগার্ড সদস্যরা পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তখন আমরা বৈধ কাগজপত্র দেখালেও তা গ্রহণ না করে ট্রলার ধ্বংসের চেষ্টা করে কোস্টগার্ড। এসময় পাথরঘাটা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের বৈধ কাগজপত্র ও হাইকোর্টের আদেশ দেখে ট্রলার ছেড়ে দেয়ার কথা বলে চলে যায়। তবে কোষ্টগার্ড সদস্যরা বিষয়টি না মেনে মঙ্গলবার রাতে ট্রলার ধংস করা শুরু করে। এ সময় জেলেরা আপত্তি জানালে দুইজন জেলেকে মারধর করা হয়। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষ শুরু হয়।

মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরো জানান, ঈদের ছুটির আগেও কোষ্টগার্ড কর্মকর্তাকে এক লাখ টাকা দিয়েছি। ঈদের ছুটির পর বাড়ি থেকে এসে আবারও আমাকে তাদের স্টেশন এ ডেকে নিয়ে ট্রলিং ট্রলারের তালিকা চায়। এবং এর থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। তিনি আরো জানান, এর আগেও কয়েক দফা টাকা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, উত্তেজনার একপর্যায়ে কোস্টগার্ড সদস্যরা জেলেদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জেলেরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এছাড়াও আটক ট্রলারে থাকা জেলেদের মারধরের অভিযোগও উঠেছে কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে।

জেলেরা দাবি করেছেন, কোস্টগার্ডের গুলিবর্ষণের সময় ভয়ে অনেক জেলে খালে লাফিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করেন। এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত  ১০ জেলে আহত ও ৪ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।
এদিকে জেলেদের ভিতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এক পক্ষ চাচ্ছে পাথরঘাটা থেকে ট্রলিং ট্রলার উচ্ছেদ করে সাধারণ ছেলেদের বাঁচানোর পক্ষে আন্দোলন করছে। 

এদিকে পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকার সমিতি অভিযোগ করছেন পাথরঘাটার কোস্ট গার্ড ক্ষমতার অপব্যবহার করে সকল বরফ মিলগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যার কারনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বাজারে মাছ বিক্রি বন্ধ ছিল। 
বিষয়টি নিশ্চিত করে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  মোঃ মেহেদী হাসান জানান, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উভয় পক্ষকে অনুরোধ করেছি। ঘটনার পরপরই পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান তিনি।

ঘটনার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কোষ্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।