তীব্র দাবদাহের মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি নেই

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

বৈশাখের গরমে অতিষ্ঠ নগরজীবন। প্রকৃতি পুড়ছে বৈশাখের দাবদাহে। এলোমেলো হয়ে পড়েছে নগরজীবন। তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। অসহনীয় গরম আর দাবদাহে বিমর্ষ এখন প্রাণ-প্রকৃতি। এ অবস্থার মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নেই ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ। তীব্র দাবদাহের মধ্যে বাসা-বাড়িতে পানি না পেয়ে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন সেসব এলাকার মানুষ।

রাজধানীর বাড্ডা, নতুন বাজার, রামপুরা, মেরুল, ডিআইটি, মালিবাগ, বাসাবো, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, পুরান ঢাকা, মুগদা, মান্ডা, লালবাগ, রায়েরবাগ-সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে পানির সংকট দেখা গেছে।

হঠাৎ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকটের কারণ হিসেবে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে কয়েকদিনের অসহনীয় গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে। মূলত সেই সব এলাকাতেই কিছুটা পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেই কারণে সেসব এলাকাতে পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু এলাকায় ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপ কম থাকায়ও এলাকাবাসীকে কিছুটা পানির সংকট পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে ওয়াসার লাইন থেকে পানি পেয়ে ওয়াসার গাড়ির মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে পানি সরবরাহের অর্ডার করেও ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। ঢাকা ওয়াসার আওতায় ১০টি মডস জোনে পানির চাহিদা জানানো হলে বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে বাসা-বাড়িতে পানি পৌঁছে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি ছয় হাজার লিটারের একটি বড় গাড়ির জন্য নেওয়া হয় ৬০০ টাকা। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি থাকায় সিরিয়াল দিয়ে, ফোন করেও এসব পানির গাড়ি পাচ্ছেন না পানি সংকটে থাকা বাসিন্দারা। ৬০০ টাকার গাড়ির জন্য ১০০০ বা ১২০০ টাকা দিয়েও সিরিয়াল পাচ্ছেন না তারা।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ভাড়া বাসায় থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী বশির আহমেদ। তিনি গত ৪-৫ দিন ধরে বাসায় পানি পাচ্ছেন না। ক্ষোভ প্রকাশ করে বশির আহমেদ বলেন, গত গত ৪-৫ দিন ধরে ওয়াসার লাইনে পানি পাই না আমরা। এত গরমে মানুষের জীবন যায় যায় অবস্থা, এর মধ্যে বাসায় পানি না থাকা যে কতটা কষ্টের তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বোঝে। এই ৪-৫ দিন গোসল নেই ঠিকমতো, বাথরুমে যাওয়া যায় না। পানি ছাড়া এই গরমে এক মুহূর্তও থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় যে পানি নেই, এ বিষয়ে ওয়াসার কোনো উদ্যোগ নেই।

একই এলাকার পাঁচতলা একটি বাড়ির মালিক রিয়াজুল ইসলাম। তিনি একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এই দাবদাহের মধ্যে পানি না থাকায় আমরাসহ ভাড়াটিয়ারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমরা ওয়াসার মডস জোনে বারবার যোগাযোগ করছি। তারা বলেছে পানি পাচ্ছে না কিছু কিছু এলাকায়। পানি সরবরাহের জন্য বারবার অর্ডার দিয়েও আমরা পানি পাচ্ছি না। রাতে এক গাড়ি করে পানি কিনে একবার ভাড়াটিয়াদের সরবরাহ করছি। পানির গাড়ি পেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ৬০০ টাকার পানির গাড়ি ১০০০/১২০০ টাকা দিয়েও অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে না।

রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা আক্কাস মিয়াও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, রান্না, গোসল, বাথরুমের জন্য পানিও ঠিকমতো পাচ্ছি না। খাওয়ার পানি বাইরে থেকে কিনে আনছি। এই গরমে বাসায় পানি না পাওয়ায় খুবই দুর্বিষহ অবস্থা যাচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করেও ‍কোনো সুফল পাচ্ছি না আমরা।

মডস জোনের আওতায় বাড্ডার বৌবাজার এলাকার ওয়াসার পাম্পের অপারেটর মনিরুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে পানি সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা মেশিন চালিয়ে ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। পানির স্তর নিচে নেমেছে কিছু কিছু এলাকায়। গরমে পানির চাহিদাও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে পানি সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে, মূলত সেই সব এলাকাতেই কিছুটা পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

যদিও ঢাকা ওয়াসার দাবি, চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে তাদের। অন্য সময় বা শীতকালে রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার থেকে ২৩০/২৪০ কোটি লিটারের। কিন্তু গরমকাল এলে এটা বেড়ে ২৬০ কোটি লিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। তবে বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পানির উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন এখন গড়ে ২৬০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে ঢাকা ওয়াসা। সার্বিকভাবে পানি সরবরাহের কোনো সমস্যা নেই, তবে কিছু কিছু এলাকায় পানি সরবরাহে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে পাঁচটি। তবে সংস্থাটি পানি পাচ্ছে চারটি শোধনাগার থেকে। উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্যপূরণ এখনো করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ ওয়াসার সরবরাহ করা পানি তারা পাচ্ছে ভূগর্ভ থেকে।

এদিকে শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসার সব মডস জোনের কার্যক্রম তদারকির জন্য ১০টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে ঢাকা ওয়াসা। রাজধানীতে পানির সমস্যা সমাধানে এসব টিম আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত পানি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মনিটরিং করবে। গঠন করা এই ১০টি মনিটরিং টিম জোনভিত্তিক পাম্পগুলো নিয়মিত ও আকস্মিক পরিদর্শন করবে। পাম্প চালকরা যথানিয়মে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হবে টিমগুলো। পরিদর্শনকালে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করবে ঢাকা ওয়াসার এ কমিটি।


আমার বার্তা/এমই