রিটকারী ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটকারী নারী প্রার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলী হুসেনের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান তারা। এরপর সেখানেই অবস্থান নেন তারা।

বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ‘এসো ভাই, এসো বোন, গড়ে তুলি অঙ্গীকার’, ‘আলী হুসেনের ছাত্রত্ব, বাতিল করো করতে হবে’, ‘নিপীড়কের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ৫ আগস্টের পরে নারীদের পোশাকের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করেছে একটি গুপ্ত সংগঠন। যারা নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আলী হুসেন নামের একজন শিক্ষার্থী তার সহপাঠীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে বিন্দু পরিমাণ ব্যবস্থা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানাই, আলী হুসেনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করবেন। তাকে একাডেমিক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবেন। সুস্থ সুন্দর নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে হবে।

জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ইসলামের নাম ধরে একটি সংগঠন নারীদের নিরাপত্তার কথা বলে, অথচ তারাই নারীদেরকে হেনস্তা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনকে পেছাতে ফাঁকফোকর রেখেছে। আলী হুসেনের বিরুদ্ধে প্রশাসন এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। যারা জাতীয় নির্বাচন ও ডাকসু পেছাতে ষড়যন্ত্র করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের লাল কার্ড দেখাবে।

ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, বিগত দেড় দশকের নিপীড়নমূলক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে বক্তব্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যে সূচনা হয়েছিল, একটি চক্রান্তকারী দেশবিরোধী শক্তি সেই স্বাধীনতাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। এই শক্তি সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে।

রোকেয়া হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক শ্রাবণী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী অন্য আরেকজন শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকি দিতে পারে না। রাজনীতিতে নারীদের নিরাপদ করে তুলতে হবে।

শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বিথি হাসান বলেন, রাজনীতিতে নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। একটা গোষ্ঠী আমাদের আটকে রাখতে চায়। ডাকসুতে নারী শিক্ষার্থীরা কম অংশগ্রহণ করেছেন। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার তিন বাম সংগঠন সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেওয়ার পর আলী হোসেন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এই হুমকি দেন।

আলী হোসেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত।’ পরে অবশ্য তিনি একটি ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন দাবি করেছেন।

তবে তার ফেসবুকের আগের পোস্টগুলোতে জামায়াতের কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। সেসময় তিনি ফেসবুক কমেন্টে নিজেকে শিবির সমর্থক বলে পরিচয় দিয়েছেন। তবে শিবিরের দাবি, আলী হোসেন শিবিরের কোনো সমর্থক নন। তিনি একেক সময় একেক দলের কর্মসূচিতে যোগ দেন।


আমার বার্তা/এমই