সাজিদ সাঁতার জানতো, ডুববে কীভাবে?- প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের
ইবিতে সাঁতারু সাজিদের অস্বাভাবিক মৃত্যু, বিচারের দাবিতে লাশ আটকে বিক্ষোভ
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১৭:১১ | অনলাইন সংস্করণ
ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহ’র মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। ঘটনা উন্মোচনে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শুক্রবার পৃথক অফিস আদেশে এই তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সাজিদের লাশ ভাসতে দেখা যায় শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে। পরে বিকেল সাড়ে ৬টায় ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে লাশ তোলা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। তার বাবা একটি মাদ্রাসার সুপারিটেনডেন্ট আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোওয়ারের চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে।
এদিকে পুকুর থেকে মরদেহ তোলার পর নাক থেকে রক্ত ঝরেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সুরতহাল রিপোর্টেও নাক থেকে রক্ত বের হওয়া, বাম হাতের কব্জির ওপরে ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে পুকুরে লাশ ভাসতে থেকে শিক্ষার্থীরা পুকুরপাড়ে জড়ো হন। প্রথমে শনাক্ত করা না গেলেও বিকেল সাড়ে ছয় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে লাশ কাছে আনলে শিক্ষার্থীরা শনাক্ত করেন।
তার সহপাঠী ও ক্যাম্পাসের সিনিয়র-জুনিয়ররা জানান, সাজিদ সাঁতার জানতো। এর আগেও সে পুকুরে নেমেছিল বিভিন্ন সময়ে। তাহলে কীভাবে পুকুরে ডুবে মারা যায়? পানিতে ডুবে মারা গেলে সাধারণত আমরা দেখি তার লাশ উপুড় হয়ে থাকে, কিন্তু সাজিদের মরদেহ ছিল চিত হয়ে। এছাড়া পানিতে ডুবে কেউ মারা গেলে তার পেট সহ শরীর ফুলে যায়। কিন্তু সাজিদের শরীরে আমরা তেমন কোন লক্ষণ দেখিনি। এজন্য এই মৃত্যুকে আমরা রহস্যজনক মনে করছি। আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য ঘটনা উঠে আসুক।
সাজিদের রুমমেট ফোকলোর বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের আমিন বলেন, আমি গত সোমবার বাড়ির উদ্দেশ্যে দুপুর ২টায় ক্যাম্পাসের বাসে চলে আসি। সাজিদের সাথে পাশের রুমে কথা হয়েছিল।
আরেক রুমমেট মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের তুষার বলেন, আমার বুধবার মাস্টার্সের একটা পরীক্ষা ছিল। তো পরীক্ষা দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে দুপুর ৩টার পর রুম থেকে বের হই। তখন ও রুমেই ছিল।
সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ বলেন, আমার ছেলের মৃত্যু রহস্যজনক। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
সুরতহাল প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হোসেন ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে অপমৃত্যুর কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর আমরা নিশ্চিত বলতে পারবো।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সাজিদের পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে। সবকিছুর প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারব।
বিচারের দাবি, লাশ আটকিয়ে বিক্ষোভ ॥ শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবি জানিয়ে শাখা ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন শোক বার্তায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মসজিদে সাজিদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তার সহপাঠীরা লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যান আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০ দিনের মধ্যে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে লিখিত মুচলেকা দিলে ভ্যান ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে লাশ তার স্বজনদের সাথে লাশবাহী গাড়িতে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে মাগরিবের নামাজের পর জানাজা শেষে কবরস্থানে দাফন করা হবে।
তদন্ত কমিটি গঠন ॥ সাজিদের মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হল প্রশাসনে তিন সদস্যের এই কমিটিতে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারীকে সদস্য ও হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ.হ.ম. নুরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ৫ সদস্যের কমিটিতে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান, আল-হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম। এই কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আমার বার্তা/জেএইচ