ই-পেপার বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
জাবি শিক্ষক সাবেরা সুলতানার দুইটি গবেষণা প্রবন্ধে জালিয়াতির প্রমাণ

গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ

* গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি করে পদোন্নতি লাভ * হয়েছেন বিভাগের সভাপতি!
আল সাঈদ মেহেদী, জাবি
১২ অক্টোবর ২০২২, ১৫:২০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে থাকা সাবেরা সুলতানার দুইটি গবেষণা প্রবন্ধে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি গবেষণা প্রবন্ধ ব্যবহার করে ২০১৭ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতিও পেয়েছেন।

ভারতের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে (আইওএইচআর-জেওএইচএসএস) ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘ইনভেস্টিগেটিং আমেরিকান রোমান্টিসিজমঃ এ্যা কম্পেরেটিভ স্টাডি’ (ভলিউম ২১, ইস্যু ৪, ভার্সন ৪ এপ্রিল ২০১৬, পাতা ৫৮-৬৫) শিরোনামে ঐ প্রবন্ধটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেম্পা’র অধ্যাপক ক্যাথরিন ভ্যান স্প্যাংকেরেনের লেখা ‘আউটলাইন অব আমেরিকান লিটারেচার’ বইয়ের বেশ কিছু অংশের মিল থাকার প্রমাণ আমার বার্তার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এই গবেষণা প্রবন্ধটি সাবেরা সুলতানা এবং বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মো. মহিউল ইসলামের যৌথ গবেষণা। মহিউল ইসলাম জাবির ৩৬তম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

প্রবন্ধটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাদের প্রবন্ধের শুরুর একটি বড় অংশের সাথে ক্যাথরিন ভ্যান স্প্যাংকেরেনের বইয়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদ ‘দ্যা রোমান্টিক পিরিয়ড, ১৮২০-১৮৬০ঃ এসেয়িস্টস এন্ড পয়েটস’ শিরোনামে আমেরিকান সাহিত্যের রোমান্টিক পিরিয়ডের প্রাবন্ধিক ও কবিদের নিয়ে লিখা অংশের হুবহু মিল রয়েছে। এই পরিচ্ছেদের পরিচিতি অংশ থেকে সাবেরা সুলতানা সেগুলো নিয়েছেন কিন্তু এজন্য তিনি কোনও রেফারেন্স বা উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করেননি।

এ ব্যাপারে মহিউল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।

এছাড়া, ২০১২ সালের জুন মাসে দর্শন বিভাগের কপুলা জার্নালের ৪৭-৫৪ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সাবেরা সুলতানার ‘বিআইএম, প্রোটগনিস্ট, ইন অ্যানিটা দেসাইস ক্লিয়ার লাইট অব ডেঃ এন এমবডিমেন্ট অফ ইমাঞ্ছিপেশন ’ নামে আরেকটি গবেষণা প্রবন্ধের বিভিন্ন অংশে চারজন ভারতীয় লেখকের বই থেকে লেখা চুরির প্রমাণও আমার বার্তার হাতে এসেছে।

প্রবন্ধটির ৪৮, ৫৪ এবং ৫৬ পৃষ্ঠার কয়েকটি লাইন ভারতের নিরু টেন্ডনের ‘আনিতা দেসাই এন্ড হার ফিকশনাল ওয়াল্ড’ নামক গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৪৮, ৫১ ও ৫২তম পৃষ্ঠার কয়েকটি লাইন ভারতের মহিত কে রায়ের ‘ইন্ডিয়ান রাইটিং ইন ইংলিশ’ গ্রন্থ থেকে কপি করা হয়েছে।

এরপরে প্রবন্ধের ৫০ ও ৫৩ পৃষ্ঠার বেশ কিছু অংশ নেওয়া হয়েছে মনমোহন কে ভত্মাগর ও মিত্তপল্লী রাজেশ্বরের ‘দ্যা নভেলা অফ আনিতা দেসাইঃ অ্যা ক্রিটিক্যাল স্টাডি’ থেকে। মনমোহন কে ভত্মাগরের ‘ফেমিনিস্ট ইংলিশ লিটারেচার’ গ্রন্থের সঙ্গে সাবেরা সুলতানার প্রবন্ধের ৪৯ ও ৫২তম পৃষ্ঠার কিছু অংশের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। এই সবগুলি বই ২০০০ থেকে ২০০৮ সালের বিভিন্ন সময়ে ভারতের আটলান্টিক পাবলিশার্স অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর থেকে প্রকাশিত হয় যেগুলি থেকে অনেক বাক্য/পরিচ্ছেদ গ্রহণ করা হয়, যার উল্লেখ সাবেরা সুলতানার প্রবন্ধের তথ্যপুঞ্জি বা পাদটীকায় করা হয় নি। উদ্ধৃতি বা উল্লেখ ছাড়া নিজের জবানিতে অন্যের ভাষার সরাসরি ব্যবহার চৌর্যবৃত্তি হিসেবেই চিহ্নিত এবং এর মাধ্যমে গবেষকের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

এ প্রসঙ্গে সাবেরা সুলতানাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ক্ল্যারিফাই করেছিলাম যখন অভিযোগ উঠেছিল। এখন যে অভিযোগ আসছে সেটা মিথ্যা।’

২০১৫-২১০৮ পর্যন্ত দর্শন বিভাগের দায়িত্ব পালন করা সভাপতি অধ্যাপক তারেক চৌধুরী জানান, ‘আমি সে সময় কমিটি করে দিয়েছলাম। এরপরে কমিটি যদি রিপোর্ট জমা দিয়ে থাকে তাহলে তা অবশ্যই বিভাগের রেজিস্টারে সংরক্ষণ করার কথা। তবে এই প্লেজিয়ারিজম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এই ব্যাপারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই শাস্তি হওয়া দরকার সে যেই হোক না কেন।’

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কামরুল আহসানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।

দর্শন বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক এএসএম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল শুনেছি। কিন্তু প্লেজিয়ারিজম হয়ে থাকলে তার দায় গবেষকের। অবশ্য সম্পাদককেও সচেতন হওয়া দরকার।’

রেজিস্টার অফিসের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ২০ জুলাই পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন সাবেরা সুলতানা। নিয়ম অনুযায়ী, এজন্য তিনি তিনটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সে বছরের ২ অক্টোবর সিলেকশন বোর্ড প্রবন্ধগুলো মূল্যায়ন ও সাক্ষাৎকার নিয়ে তার পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে।

বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, এর মধ্যেই গবেষণা প্রবন্ধে জালিয়াতির একটি অভিযোগ পান উপাচার্য। পরে ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় জালিয়াতির বিষয়টি উঠলে সেদিনের মতো তাকে পদোন্নতি দেওয়া থেকে বিরত থাকে সিন্ডিকেট। কিন্তু ২৯ নভেম্বর আরেকটি বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। আর এই সিদ্ধান্ত আগের সিন্ডিকেটের তারিখ থেকে কার্যকর হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ এর ৩ নং ধারায় বলা আছে, ‘কোনও শিক্ষক শিক্ষকতা-গবেষণাকর্মে উদাসীন কিংবা অবহেলাকারী হিসেবে গণ্য হলে তাকে লঘু শাস্তি হিসেবে সতর্কীকরণ/তিরস্কার এবং গুরু শাস্তি হিসেবে পদাবনতি/বরখাস্ত করা হতে পারে। পাশাপাশি এক বা একাধিক শাস্তিও আরোপ করা যেতে পারে।’

এর আগে ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে একটি অনলাইন পোর্টালে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি।

এ বিষয়ে তৎকালীন উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) এবং বর্তমান মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ নূরুল আলম বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে অবগত ছিলাম না। আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ না পেলে তো কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।’

যদি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না দেয়াই হয়, তাহলে সাবেরা সুলতানা কিসের ভিত্তিতে কার কাছে প্লেজিয়ারিজম নিয়ে ক্ল্যারিফাই করলো সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। এ ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি।

ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যেহেতু প্রশাসনের সাথে যেহেতু জড়িত না সেহেতু কিছু বলার বা করার সামর্থ রাখি না। আমরা যারা বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক আছি, আমাদের কিছু নৈতিক দায়িত্ব থাকে একাডেমিক দিক থেকে। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা প্রমাণ সহকারে তৎকালীন মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে জানিয়েছিলাম। উনি দেখে বলেছিলেন এই ব্যাপারে দেখবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো তিনি আমাদের এই কথা আমলে নেন নাই। যথারীতি পদোন্নতি দেয়া হয়। আমরা সব সময় চৌর্যবৃত্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকি, প্রথমত এটা কাম্য নয়, সাথে লিগ্যালি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এখানে এই বিভাগটা হচ্ছে একটা পরিবারের মতো। তবে এখানে যদি কেউ ক্রাইম করে থাকেন সেটার দায় দায়িত্ব তো বিভাগ নেবে না। এটা উনার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়, ক্রাইম করে থাকলে পানিশমেন্ট পেতে হবে। আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি জানে তাহলে উচিৎ প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘সাবেরা সুলতানার বিষয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সে কখনই ঠিকমত ক্লাস নেয় না, ক্লাসে এসে ৫-১০ মিনিট ক্লাস করিয়ে চলে যায়। আমাদের প্রথম বর্ষে সে টানা ৮-৯ মাস কোন ক্লাসই নেয় নি। এছাড়াও তিনি প্রায়ই ক্লাসে এসে অসংলগ্ন আচরণ করতেন। একাধিক ক্লাসে এসে তিনি আমাদের ‘এই তোমরা কারা?’ ‘কত ব্যাচ তোমরা?’ ‘আমি কোনো কোর্স নেই তোমাদের?’ এধরনের কথাবার্তা বলতেন । তার বিরুদ্ধে প্রতিটি ব্যাচেই একই অভিযোগ রয়েছে।’

তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা

তীব্র তাপদাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (২০ এপ্রিল) সংবাদ

মতিঝিল আইডিয়াল কলেজে অভি়ভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন শেষ

২০২৪-২০২৫ গভর্নিং বডিতে নির্বাচিত হলেন প্রাথমিকে  মো. শাহাদত ঢালী, মাধ্যমিকে  মোহাম্মদ আলী ও শিব্বির আহমেদ,

ছাত্ররাজনীতি বন্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বুয়েট

ঈদের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পুরোদমে খুলেছে গতকাল বুধবার। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ব্যাচের টার্ম

জবিতে নববর্ষ উদযাপন কাল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) নানা আয়োজনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলা নববর্ষ  উদযাদন করা হবে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাবুলকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় খুন হন মিতু

ভারতীয় মসলায় ক্যানসারের উপাদান, নিষিদ্ধ হংকং-সিঙ্গাপুরে

সনদ-টাকা কারা নিয়েছেন খুঁজে বের করবো: ডিবিপ্রধান

শিশুর হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ কি

সারাদেশে ইন্টারনেটের ভোগান্তি চলতে পারে এক মাস

ব্যাংক একীভূতকরণ দায়মুক্তির নতুন মুখোশ: টিআইবি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ নয়, অনলাইনে ক্লাস চান অভিভাবকরা

তিনদিন মেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ ফিরছে

জাতীয়করণে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষক কাওছার আলী বরখাস্ত

উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের তফসিল ঘোষণা

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী

দায় স্বীকার কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানের

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোটি টাকার মাদকের পার্সেল, গ্রেপ্তার ৩

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৩৯.৬ ডিগ্রি

কেএনএফের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৭ জন কারাগারে

জিম্বাবুয়ে সিরিজের ক্যাম্পে সাইফউদ্দিন-আফিফ

সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩১৩৮ টাকা

কাতারের কাছে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা চায় বাংলাদেশ

পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ কিশোরের মৃত্যু